বর্ষামঙ্গল
শেখ আসমত
" ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘনগৌরবে নবযৌবনা বরষা শ্যাম গম্ভীর সরসা "|- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সময়ের সরল প্রবাহে প্রকৃতি ক্রমশ পাল্টে যেতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মেই | এই পাল্টাপাল্টি হচ্ছে ঋতুর পরিবর্তন | আমাদের সুজলা-সুফলা বঙ্গভূমি | আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই নিয়ে বর্ষাকাল | রিমঝিম বৃষ্টি, একরাশ সজীবতা, আর কদম ফুলের সুবাস নিয়ে হাজির হয় বর্ষাকাল |
দিকে দিকে মেঘের বিজয় বৈজয়ন্তী উড়িয়ে সে আসে রাজরাজেশ্বরের মতো | তার আবির্ভাব রং ও -রসের অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তারে, তার আবির্ভাব ভাবির সুদুরা ভিসা রে, তার আবির্ভাব সংগীতের অপূর্ব সুর মূর্ছনায় | দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সে যখন আসে, তখন কেবল আমাদের বাইরের আকাশটাই নয়, আমাদের মনের আকাশটাকে ও সে তার মেঘ মাধুর্যে পরিপূর্ণ করে আসে অবিশ্রান্ত রস বর্ষণে তাকে কোমল ও সিক্ত করে তোলে | সঙ্গে সঙ্গে নিদাঘ তপ্ত বঙ্গ প্রকৃতির রূপ মূর্তি সৌন্দর্যের নবধারা জলে স্নান করে যেন অপরূপ হয়ে ওঠে | তার চোখে লাগে লাবণ্যের সুস্নিগ্ধ মায়া কাজল | তার অঙ্গে অঙ্গে নেমে আসে কোমল প্রশান্তি, এক সুদূর ব্যাপ্ত স্নিগ্ধতা, উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে এক নয়ন লোভন অনুপম শ্যামশ্রী|
স্নিগ্ধ শীতল ধারা বর্ষণে রোমাঞ্চ জাগে ধরিত্রীর সর্বাঙ্গে | অরণ্যের বুকে জেগে ওঠে বহুপ্রতীক্ষিত মর্মর মুখর মহোল্লাস | তাপদগ্ধা পৃথিবীর সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার ঘটে অবসান | মাঠ ঘাট,নদী নালা পূর্ণ হয়ে ওঠে কানায় কানায় | ধূলি-ধূসর পৃথিবীর খরতপ্ত দিনের হয় অবসান | এবার দুর পরবাসিদের ঘরে ফেরার পালা | নদীপথে মাঝি-মাল্লাদের কন্ঠ থেকে শোনা যায় সারিগানের অপূর্ব উল্লাস |
বর্ষা বাংলার প্রাণের ঋতু | তার মন্ত্র বলে কঠিন পাষাণ গলে গিয়ে ফলে অফুরন্ত ফসল | মরুবিজয়ের শ্যামল কেতন উড়তে থাকে দিকে দিকে | গুরু গুরু মেঘের মত্ত মাদল বাজিয়ে সে মেতে ওঠে এক সজল উৎসবের উল্লাসে | তার সঙ্গেও অপরূপ ঐক্যতান সৃষ্টি করে আনন্দমুখর বিচিত্র পক্ষী কাকলি | বর্ষা তাই বাঙালির বড় মায়াময় ঋতু, প্রাণের ঋতু |
Comments