ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি কবিতার অনুবাদ এবং অনুবাদ সংক্রান্ত দু চার কথা:-- ৮
তাপস গুপ্ত
লাতিন আমেরিকার পাঁচ মহিলা কবির কবিতার বেশ কিছু অনুবাদ এখানে প্রকাশের প্রসঙ্গ যোজনায় দু এককথা বলে ফেলার স্পর্ধা বাহুল্য দেখিয়ে ফেলছি বার বার। সেই স্পর্ধার দাক্ষিণ্য অনুকুল্যে বলি, এই অনুবাদ মূল ভাষা থেকে নয়, এটি অনুবাদের অনুবাদ, সৃষ্টির তৃতীয় জন্ম।
" রচিল যে কৃত্তিবাস পূর্ণ অভিলাষ/বন্দিল সে বাল্মিকী পুরাণ"-- এইযে কবির অনূদিত ভাষ্য এবং তার বিনয় আকুতিতে সামান্য হলেও কি কবির এটিকে " স্বরচিত কবিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চিরায়ত" প্রয়াস (হয়ত লঘু)নেই? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উদাহরণ আকর্ষণে পূর্বেই উল্লেখ করেছি অনুবাদ কবিতা এক আলাদা বস্তু, সে নিজেই এক সৃষ্টি। অনুবাদক তার নিজের দক্ষতা নৈপুণ্যে নিজের দেশ মাটি সংস্কৃতির জলবায়ুকে কিছুটা হলেও অনুবাদে ঢেলে দেবার অভীপ্সা রাখেন। লক্ষ্য রাখার বিষয় এই যে, এতে মূল কবিতার দেহ প্রাণের সামুহিক হয় যেন না ঘটে। আমাদের মধ্যযুগের কৃত্তিবাস,মালাধর বসু যে মূল কবিতার সঙ্গে নিজের দেশ ও জলবায়ুকে অনুবাদে মিশিয়ে দিতে পেরেছিলেন তার ঐতিহাসিক মূল্য অসীম বলেই পন্ডিত জনেরা মনে করেন।
ব্যক্তিগত অনুভবে বলতে পারি, অনুবাদ কখনোই সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি দানে সক্ষম হয় না। ঠিক হল না বা আরও একটু সময় দেয়ার প্রয়োজন ছিল -- এই গোত্রীয় চিন্তা ভাবনা অসন্তুষ্টি চিহ্ন নিয়ে অস্বস্তি জনক ভাবেই জাগতিক থাকে।
পুয়ের্তোরিকান কবি জুলিয়া ডি বার্গোস (১৯১৪-- ১৯৫৩) এর কবিতা আগেও অনুবাদে এনেছি। এবারে তাঁরই আর একটি কবিতার অনুবাদ দেব। তাঁর অনুবাদিত ইংরেজি কবিতাটির নাম," Farewell from Welfare Island" বাংলায় করেছি " সমৃদ্ধশালী দ্বীপ থেকে প্রস্থান"। কবিতা টি পাঠের আগে এই প্রসঙ্গে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপধ্যায়ের কিছু বক্তব্য আমার মত করে সাজিয়ে দিলাম:
এটি প্রায় ধ্রুব সত্য যে , কোনও অনুবাদশেষ বা চূড়ান্ত অনুবাদ নয় বারে বারে তার সংস্কার বা পরিমার্জন সম্ভব। বিশেষ করে কবিতার অনুবাদ অসম্ভবের সাধনা প্রায় কেননা কবিদেরই একজন সেভাবে ভেবেছিলেন, কবিতা কিছু বোঝায় না সে শুধু হয়ে ওঠে। এবং সে হয়-- মাত্র একবারই। একটু মুচকি হেসে মালার্মে দ্যগা কে বলেছিলেন কবিতা তো আর ভাব দিয়ে বিষয় দিয়ে লেখে না, লেখে কথা দিয়ে। কথা সাজাবার কৌশলটাই আসল এবং সেই কৌশল শুধু কবি জানেন, সেই জন্যেই তাদের এও মনে হয় অনুবাদে যা হারিয়ে যায় তা আসলে কবিতাই।
এই বিরুদ্ধ মতের শক্তি প্রাবল্য সত্বেও তা সহনে নিয়ে অসম্ভবের সাধনায় থাকবে অনুবাদ এবং অনুবাদের মধ্যে থাকবে অনুবাদকের দেশ কাল জারিত সময় স্বত্বা এবং স্বত্বাময় তার অস্তিত্ব বিন্দু।
Farewell from Welfare Island
It has to come from here,
right this instance,
my cry into the world.
The past is only a shadow emerging from
nowhere.
Life was somewhere forgotten
and sought refuge in depths of tears
9and sorrows;
over this vast empire of solitude and darkness.
Where is the voice of freedom,
freedom to laugh,
to move
without the heavy phantom of despair?
Where is the form of beauty
unshaken in its veil, simple and pure?
Where is the warmth of heaven
pouring its dreams of love in broken
spirits?
It has to be from here,
right this instance,
my cry into the world.
My cry that is no more mine,
but hers and his forever,
the comrades of my silence,
the phantoms of my grave.
It has to be from here,
forgotten but unshaken,
among comrades of silence
deep into Welfare Island
my farewell to the world.
সমৃদ্ধশালী দ্বীপ থেকে প্রস্থান
পৃথিবী ভাসানো কান্নায় ছিল
সমৃদ্ধ আর মঙ্গলকামী দ্বীপ থেকে
প্রস্থানকালীন চিহ্ন আমার।
অতীত কেবল উদীয়মান ছায়াবাকল।
জীবন প্রত্যাখ্যানে ভুলে ছিল আস্থার আশ্রয়
কান্নায় ভিজে শিকড় আর বিষণ্নতার বিজড়ন,
ভুলে ছিল বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্যের
নির্জন অন্ধকারের গভীরতা,
কোথায় ছিল মুক্ত হাসির ঢেউভাঙা তরঙ্গ প্রপাত,
নড়ানো গিয়েছিল কি দুর্বহ হতাশা
অথবা তার মায়ামূর্তির মিথ্যে আভাস?
কোথায় হারিয়েছিল সেই সহজ শুদ্ধ
অকম্পিত গুণ্ঠনে আবরিত সুন্দর?
কোথায় লুকিয়ে ছিল স্বর্গীয় উষ্ণতায়
আচ্ছন্ন আত্মায় ভাঙনে ন্যুব্জ
স্বপ্নময় উদ্দীপনা কল্পনায়?
পৃথিবী ভাসানো কান্নায়
নজিরে থেকে যাবে সময় আমার,
নজিরে ভাসানো এই সময় কান্না আমার নয়
তবুও চিরকাল নীরব সমর্থনে থাকে বন্ধুরা
আমারই সমাধি কল্পনায়।
নির্জনে থেকে যাওয়া বন্ধু স্যাঙাতেরা
এই নজিরে থেকে যাওয়া সময়
অটল বিস্মৃতি কেমন অবিচল
তোমাদের কল্যাণী দ্বীপ থেকে বিদায় আমার।
(ক্রমশ...)
Comments