top of page
Search
agantukpotrika

রামধনু ।। ২৫তম সংখ্যা ।। ধারাবাহিক ।। সুদীপ ঘোষাল


অজয়পাড়ের উপকথা

সুদীপ ঘোষাল


রূপসী বল,ছাড়ো তো ওসব কথা। এখন চলে গেলেই হলো।

মুরারী ভালো ব্যবসাদার। সে নিশিকান্ত কে দলে নিলো।ভালো আলকাপ করে। নাম আছে।দলের নাম দিলো,নিশিকান্তর আলকাপ।


তারপর পরের দিন রাতে শুরু হলো আলকাপ।সুমনের বাঁশির তালে নিশিকান্ত আর রূপসী নাচ আরম্ভ করলো।তারপর শুরু হলো আলকাপ।নিশিকান্ত একটা রসগোল্লার হাঁড়ি দুপায়ের ফাঁকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি এলো।তারপর ঝুলন মেয়ে সেজে নিশিকান্তর হাঁড়ি থেকে রসগোল্লা খেলো।আহা কি মি। আরও খাবো।

নিশিকান্ত বললো,তোকো হাঁড়ি উপুড় করে রস খাওয়াবো।আয় আমার শালি।

এইভাবে আসর জমে উঠলো। প্রচুর টাকা পেলো নিশিকান্ত।তার নাম শুনেই লোকে ভিড় করে আলকাপ শুনতে আসে।মুরারী বলে,দেখো সুমন, যাত্রার থেকে টাকা বেশি আলকাপে।মানুষ যা চায় তাই করতে হবে।তা না হলে না খেয়ে মরতে হবে।



সুমন কোনো উত্তর দেয় না। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

সুমন আজ অনেক দিন পরে বাড়ি গেলো।ছেলেটি বড় হয়েছে।পাশে কুড়োর বাড়ি।বিধবা হওয়ার পর ও একা থাকে। একা রান্না করে খায়।একাদশী করে।প্রচুর উপোষ করতে হয়।সুমন একবার বলেছিলো,তুমি আমার ভায়ের বৌ।তুমি ভালো গান জানো।চলো যাত্রাদলে গান করবে।এভাবে জীবনটা নষ্ট করে কি লাভ।খেনী রেগে গিয়ে বলেছিলো,বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। গ্রাম থেকে বাস ওঠাবে না কি?ও ওর মত থাক।সুমন চিন্তা করে দেখলো,এখনও কুসংস্কার দূর হতে অনেক সময় লাগবে।তারপর নিজের সংসারের কথা ভেবে আর ওসব নিয়ে কথা বলে নি।কুড়ো,খেনী দুইবোন। কালোকে কুড়োর কাছে রেখে শান্তি পায় দুদন্ড খেনী।নিঃসন্তান কুড়ো কালোকে পেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে। মেনকা গ্রাম থেকে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হয়েছে।এম.এ পড়ছে।লেডিস হোষ্টেলে থাকে।অনেক বান্ধবী আছে।ঠিকমত সময়ে খেয়ে নিয়ে একসাথে যাওয়া আসা করে।মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি যায়।ছুটি থাকলে গ্রামে যায়।একদিন সকলে চিড়িয়াখানা গেলো।সেখানে পশু পাখিদের দেখে খুব আনন্দ পেলো সবাই।মেনকা খাবারের জোগাড় করলো।ডিম টোষ্ট আর শস,সঙ্গে স্যালাড।মেনকা বললো বান্ধবী সোমাকে,জানিস আমাদের গ্রামের বাড়ি মাটির ছোটো বাড়ি।বাবা বলেন যতই ছোটো হোক বাড়ি হলো মন্দির।জানিস আমার মা ছোটোবেলা থেকে আমাকে শেখাতেন, একটা পাখির বাসাও ছোটো। কিন্তু অবহেলার নয়।কত পরিশ্রম করে তিলে তিলে একটা বাসা তৈরি হয়। কোনো মন্দির,মসজিদ,গির্জা ছোটোবড় হয় না।সবখানেই সেই একই মালিকের বাস। সোমা বললো,তোর কথা শুনতে ভালোলাগে।আমদের ভারতবর্ষ মহান।চিড়িয়াখানা থেকে ফিরে রাতে ভাত, তরকারী আর মাছের ঝোল খেলো ওরা।তারপর ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে সকলে প্রাতঃরাশের পরে গল্প করতে বসলো।আজ ছুটির দিন।মেনকা তার গ্রামের মেলা যাবার বর্ণনা করলো।সবাই মন দিয়ে শোনে তার সত্যি গল্প,তার জীবনের গল্প।বুঝলি সোমা একবার গ্রাম থাকে। গোরুর গাড়ি চেপে দধিয়া বৈরাগ্যতলার মেলা যাচ্ছি। পিছনে বাঁধা রান্না করার সরঞ্জাম। মেলা গিয়ে রান্না হবে। বনভোজন। সঙ্গে মুড়ি আছে।



বড়দা বললেন,গিয়ে প্রথমে মেলা ঘোরা হবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। মা বললেন,তোরা ঘুরবি আমি আর মানা রান্নাবান্না করবো। তারপর দুপুরে মেলা ঘুরবো। গাড়ি চলেছে ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দে। গোপাল কাকা বললেন,আরে, দেখ দেখ জিম চলে এসেছে। বড়দার ভয়ে ব্যাটা গাড়ির তলায় হাঁটছে।

জিম নেড়ি কুকুর হলেও, আমরা ওকে জিম বলেই ডাকি। কুকুর ভাবি না। অনেক মানুষের থেকেও ওর ভব্যতা অনেক বেশি।আর একটা মেলায় যেতাম। পঞ্চাননতলার মেলা যেতে একটা আল রাস্তা ছিলো। আমরা ছোটোবেলায় বারবার ওই রাস্তা ধরে আসা যাওয়া করতাম। দুপাশে কাদা ভরতি ধানের জমি। কি করে কাউকে ওই কাদায় ফেলা যায়, এই কুবুদ্ধি আমাদের মাথায় খেলা করতো। আর তাই হতো। ধপাধপ কাদায় পরে যেতো অনেকেই। আর আমরা কি মজা, কি মজা করে চিৎকার করতাম। মার খেয়েছি খুব। বদ বুদ্ধির জন্য।যাইহোক, গোরুর গাড়ি একবার থামলো। তামালদা আর আমি জমি দিয়ে হেঁটে গেলাম। দেখলাম আখের জমি। বললাম,একটা আখ খাবো। তামালদা বললো, না পরের জমি।

-- একটা তো, কিছু হবে না।


( ক্রমশ ... )




11 views0 comments

Comments


bottom of page