top of page
Search

২৮শে মার্চ সংখ্যা ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সুদীপ ঘোষাল

agantukpotrika

অজয়পাড়ের উপকথা

সুদীপ ঘোষাল


নতুন পর্ব


মেয়েটির রুটি বেলা দেখে পছন্দ করেছিলেন। নিজের বড় ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার ফলেই এই বিবাহ অনুষ্ঠান। অংশুমানরা ছােট লাইনে ট্রেনে করে বরযাত্রী গেল। আর বড়দা গেলেন জিপ গাড়ি করে। খুব আদর-আপ্যায়ন হল বিয়ে বাড়ি আবাভায়। পরের দিন সকালবেলায় প্রভাতবাৰু সদলবলে চলে এলেন পুরুলেতে। আর একঘণ্টা পরে এল বরের গাড়ি। কন্যাকে নিয়ে এসে মা রক্ষাকালী’র ধুলাে মাথায় দেওয়া হল। বেশ ধুমধামের সঙ্গে অংশুমানের বড়দার বিবাহ হয়ে গেল। তখন দিলীপের গ্রামের বাড়ি খড়ের চাল, মাটির দেয়াল। দিলীপ মনে মনে স্থির করল পাকা বাড়ি করতেই হবে। দিলীপ বাবাকে বলল, “বাবা দেখে নিয়াে, দু-বছরের মধ্যে আমি পাকা বাড়ি করব।" বাবা প্রভাত বললেন, "মা রক্ষাকালীর কৃপা থাকলে সবই হবে। মধুসূদনের কি অশেষ কৃপা। দু-বছরের মধ্যেই দিলীপ পুরুলেতে পাকা বাড়ি গড়ে তুলল। বাবা আশীর্বাদ করলেন, “তুই আরও বড় হৰি। বার, অংশুমান, বড়দার স্ত্রী, প্রভাতবাবু আর গীতাদেবী এই পাঁচজনকে নিয়ে সংসার। দুই বােনের বিয়ে দিলীপ দিয়ে দিয়েছে। আর রিলিফ ও দিলীপ নিজে দুজনে লিলুয়ায় স্টিল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। প্রভাত বাবুর সংসার ভালাে-মন্দে, সুখে-দুঃখে বেশ ভালােভাবেই চলে ছিল। এখন আর বন্যায় বাড়ি ভেঙে পড়ার ভয় নেই। ছেলে পাকা বাড়ি করেছে। প্রভাত বাবুর কষ্টের জীবনে এটা বিরাট বড় ঘটনা।গ্রাজুয়েট হওয়ার পরে অংশুমান সুরেন্দ্রনাথ ল কলেজে ভর্তি হল। রাত্রিতে কলেজ আর দিনে টিউশনি করে রােজগার করে। সঙ্গে সাহিত্য চর্চা। বিভিন্ন লেখকের বই পড়াশােনা করা আর তার সঙ্গে নিজে লেখার অভ্যাস চালিয়ে যেতে লাগল অংশুমান। জোয়ার বলে একটি দেওয়াল পত্রিকা অংশুমান চালিয়েছে প্রায় দশ বছর ধরে। বন্ধু গৌতম এসে বলত, “ব্যাটা পড়াশুনার বেলায় নেই, চাকরি পাবি কি করে?সত্যিই একটা সামান্য চাকরি যে জীবনে কত প্রয়ােজনীয় তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পায় অংশুমান। লিলুয়ার বন্ধুদের মধ্যে গােরা, গৌতম একই স্ট্যান্ডার্ডের ছাত্র হয়েও ভালাে চাকরি পেয়েছে। কারণ একটাই, নিয়মিত চাকরি সংক্রান্ত বই নিয়ে পড়াশুনা এবং তার অনুশীলন। অংশুমানের সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কোনাে ভালাে চাকরি হল না। টাকাপয়সা না থাকলে,সম্মানও নেই। কিন্তু শুধু অর্থকেই যারা জীবনের মাপকাঠি করে তাদের জীবনে সুখ অধরাই থেকে যায়। নিজের মনুষ্যত্ব দিয়ে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে যে আনন্দ সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সামান্য অর্থে কিন্তু সেই আনন্দ কেনা যায় না। অর্থই অনর্থের মূল কথা মাঝে মাঝে আমরা ভুলে যাই।অংশুমানের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই প্রেম করে সুন্দরী মেয়েদের সাথে এই বয়সে সব মেয়েই ছেলেদের কাছে সুন্দরী। রমেন অংশুমানকে একদিন এসে বলল, "আমার একটা কাজ করে দিবি? অংশুমান বলল,কি?" রমেন বলল, "শুধু ফেসবুকে কথা বলে বা হােয়াটস আ্যপের যােগাযােগে কাজ হচ্ছে না। আমি একটু নিরালায়





প্রীতির সঙ্গে কথা বলতে চাই।” অংশুমান বলল, "কি করতে হবে বল?

"তুই বলবি রমেন তােমাকে চন্দন হলের কাছে থাকতে বলেছে,ঠিক আছে বলব। কিন্তু কখন ?"বিকাল তিনটের সময়।"ঠিক আড়াইটে থেকে অংশুমান প্রীতির কলেজ যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে আছে। এখন কলেজ থেকে বাড়ি আসবে। হঠাৎ দেখল সবুজ শাড়ি পরে প্রীতি ফুটি চালিয়ে আসছে। অংশুমান বলল, “এই যে ম্যাডাম, একটু দাঁড়ান।”প্রীতি অংশুমানকে চেনে রমেনের বন্ধু হিসাবে। প্রীতি বলল, "কি বলছেন বলুন।”

অংশুমান বলল, “তিনটের সময় চন্দন সিনেমা হলের কাছে তােমাকে পাড়াতে বলেছে রমেন।” প্রীতি বলল, “ঠিক আছে। আমি এই কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাড়ি থেকে একটু চেঞ্জ করে আসছি।” রমেন সেইদিন অংশুমানকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল এতবড় একটা উপকার করার জন্য। কারণ রমেন একটি লাজুক, মুখচোরা ছেলে। কোনােদিন প্রীতির সঙ্গে পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারেনি। আজ চুটিয়ে প্রেমজীবনে অনেকরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চিত করে একটি মানুষ তার চলার পথকে অভিজ্ঞ করে তােলে। পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে সবাই আমরা এক একটা অভিনেতা। প্রতিনিয়ত অভিনয় করে চলেছি। আবার কাল এসে সমস্ত নাটকের যবনিকা টানে একদিন। তবু মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আশা করতে থাকে। এই আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আশা, এগিয়ে চলার লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকলে একটা মানুষ জড় পদার্থে পরিণত হয়ে যায়। তাই যত দুঃখই আসুক, যত বাধাঁই পথ আটকে দাঁড়াক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে নির্ভীকভাবে, স্থিরচিত্তে। মানুষকে ভালােবেসে মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে হবে আমাদের। মহাপুরুষরা বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, কোরান, বাইবেল সব ঘেঁটে দেখেছেন মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু পৃথিবীতে নেই। মানুষের মাঝেই দেবতা, তাদের মাঝেই শয়তানের বাস। মানুষের মাঝেই স্বর্গের আর নরকের যন্ত্রণা বিদ্যমান। প্রভাত বাবুর আবার একটি কন্যাকে পছন্দ হয়েছে। ধীর, স্থির শান্ত কন্যা। এই কন্যা তিনি মেজছেলে রিলিফের জন্য ঠিক করেছেন। মখারীতি সমস্ত নিয়ম মেনে রিলিফের সঙ্গে শান্ত কন্যাটির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর রিলিফ বৌকে বাবা-মার কাছে রেখে চলে গেল। প্রভাতবাবুর শরীর খুব একটা ভালাে নেই। তাই তিনি সকলের সংসার গুছিয়ে দিয়ে যেতে চান। ছেলেরা সবাই সুখে থাকবে, এটা কি কম কথা !বই তিনি স্ত্রী গীতাদেবীকে বললেন, "অংশুমানের বয়সও তিরিশ পেরিয়ে গাছে। যদি তার বিয়েটাও দিয়ে দেওয়া যায় তা ভালাে হয়।"অংশুমান এখন কলকাতার একটা নার্সিংহােমে ভর্তি হয়েছে। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হবে। কত রােগী শত যন্ত্রণা অবজ্ঞা করে আনন্দে আছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। একটি বছর পঁচিশেক ছেলের অর্শ অপারেশন হয়েছে। আজ অংশুমানের হবে। একটু ভয় ভয় ভাব। ছেলেটি অংশুমানকে নিজের ব্যথা নিয়েও একটি গান শােনাচ্ছে, 'তাোমার হল শুরু আমার হল সারা', এই গান শুনে অংশুমানের চোখে আনন্দে জল এল, কত যন্ত্রণা সহায করে ছেলেটি শুধু তাকেই আনন্দ দিতে গান গাইছে। এ তাে মহাপুরুষের হৃদয়। এটিও এক ধরনের সমাজসেবা। সমস্ত ভয় কাটিয়ে অংশুমান অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করল।অংশুমানের বড়দা দিলীপের পর পর ছয় বছরের মধ্যে তিন কন্যাসন্তান হল। মেজদা রিলিফের গত চার বছরে একটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান জন্ম নিল। বড়া লিলুয়া থেকে এসে অংশুমানকে বলল, “কি রে বিয়েটা সময়ে সেরে ফ্যাল, যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে দেরি করে লাভ নেই।”অংশুমানের অপারেশন হওয়ার পর চার বছর কেটে গেছে। মনে মনে ভাল, বিয়েটা বাবা বেঁচে থাকতে করে নিলে ভালাে হয়। বাবার চোখে গ্লুকোমা। ভালাে দেখতে পান না। শরীরও খুব একটা ভালাে নেই। তাই বিয়েটা করে নেওয়াই স্থির করল অংশুমান। অংশুমান দেখতে কনেপক্ষ থেকে লােক এলেন। অংশুমনি বাবা-মার সঙ্গ বেশিদিন মিজি পায়নি। পুরুলেতে এসে দিলীগ বাড়ি দোতলা করাকাজগে নেনে পল। থেকে তিন মাসের মধ্যে দোতলা কমিটি। এখন আর খালার কথা । নেই। উপরের ঘরে একটিতে আগুন ও মা, মাটিতে মি । পরিবার। নিচে বাবা, মা ও বাৰু। বাু এখন ব্যবসা করে। সঙ্গে মিছিল-মিটিং অ্যাটেন্ড করে। বেশির ভাগ সময় না বাইরে কাটা। পলি পরে ভুল কুড়ি বাসস্ট্যান্ডে একটি জুতার দোকান করে। জুম চাষ দেখাশােনা করেন। দুটি মেয়ে এামের হইলে পড়ে। আর ছোট মেয়ে, এখনও ভর্তি হয়নি। প্রভাতবাবুর শরীর আরও ভেঙে পড়ল। যে সংসারকে তিনি কি সিরে আগলে রেখেছেন সেই সংসারকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রভাতশাষতে পেরেছেন আর বেশিদিন নয়। চোখে মুকোমা হওয়ার ফলে একলম দেশ পান না। অংশুমানের স্ত্রী দেবী ছয়মাস হল এক পুতসস্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রভাতবাবুর বড় আশা ছিল নাতিকে স্বচক্ষে দেখলেন। কিন্তু হয়। নিয়তি কেন বাধ্যতে'। তিনি নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। বিয়ের পরে অংশুমান তারাপীঠে মা তারার কাছে পুত্রস্তান প্রার্থনা করেছিল। মা তারা দয়া করেছেন, বড়দার তিন কন্যা, মেজদার এক কন্যা আর এক পুত্র। অংশুমানের এক পুর। সবাইকে সুস্থ অবস্থায় রেখে প্রভাত একদিন গভীর রাতে লীঘরে শেষ নিশ্বােস ত্যাগ করলেন। বটগাছের ছায়া থেকে বঞ্চিত হল সমগ্র পরিবার। দুঃখে-বেদনায় সকলে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিল। কিন্তু মৃত্যু তার নিষ্ঠুর সত। যুগে যুগে মৃত্যু তার আপন এর পতাকা উড়িয়ে সদ্পে চলেছে, চলবে। এর কোনো শেষ নেই।




প্রভাতবাবুর শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। দশদিন কঠোরভাবে পুরাে সাদা কাপড় পরে শোক পালনের মাধ্যমে পিতার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি জাপন করে তার আত্মারবাবার মৃত্যুর পর তার চার ছেলের মধ্যে সব থেকে ছোট ছেলে বাবুর বিয়ে বাকি আছে। আর সবাই নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বাবু নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।। একদিন বাবু শিবলুনে কোনাে একটা কাজে গেছে। বাবুর এক বন্ধু বলল, “বাবু, এখানে একটি ব্রাহ্মণের মেয়ে আছে। যদি পারাে একবার দেখে যেও, তােমার এবার বিয়ে করা উচিত।” বাবু অত গুরুত্ব না দিয়ে বলল, "দেখা যাবে"। বন্ধু বলল, “তাহলে শুক্রবারে শিবলুন এর একটি অনুষ্ঠান আছে। অনুষ্ঠানে মেয়েটি গান করবে, তুমি তখন দেখে নিতে পারবে।”বাবু শুক্রবারে ঠিক সময়ে শিবলুনে গিয়ে হাজির হল। ঠিক দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হল। উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইবে বেলা চ্যাটার্জি। মাইকে ঘােষণা শুনে বাবু সামনের চেয়ারে বসল। বেলা একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইল, সুন্দর হে সুন্দর। বাবুর পছন্দ হয়ে গেল মেয়েটিকে। মেয়েটির বাড়িতে বড়দা ও বৌদিকে পাঠিয়ে দিল কথাবার্তা বলার জন্য। সবরকম কথাবার্তা পাকা করে বড়দা ও বৌদি ফিরে এলেন।। | অগ্রহায়ণ মাসের একটা শুভ দিন দেখে বিবাহ সুসম্পন্ন হল। চার ভাই, সকলের বিয়ে হয়ে গেল। সাজানাে সংসারে সকলে প্রাণমন খুলে থাকত। অভাব থাকলেও সংসারে সকলে হাসিখুশি থাকত। অংশুমান খাবার খেত খুব বুঝেশুনে। কানে মশলাযুক্ত খাবার সে পছন্দ করত না। একবার এক বিয়েবাড়িতে গিয়ে অংশুমান খাওয়া-দাওয়ার পর বড় এল। বাড়িতে এসে সেবার সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। অনুষ্ঠান বাড়িতে সে সহজে যেতে চায় না। যে কোনাে অনুষ্ঠানে চলে যায় বাবু। একদিন বাবু ফোন করে জানালাে, অংশুমান আমাদের স্কুলে শিক্ষকের পদ খালি আছে। তুমি একটা দরখাস্ত দিয়ে যাও। অংশুমান সেই দিনই একটা দরখাস্ত লিখে জমা দিয়ে এল...


( চলবে )




 
 
 

Comments


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page